মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েতের দু’টি ক্যাম্পে আটক হয়ে নির্যাতনের শিকার সাড়ে চার হাজার অবৈধ বাংলাদেশীর মধ্য থেকে অবশেষে তিন শ’ শ্রমিক দেশে ফিরেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে কুয়েত এয়ারওয়েজ এবং কুয়েতের জাজিরা এয়ারলাইন্সের বিশেষ দুটি ফ্লাইটে তারা ফেরেন। দেশে ফেরার আগে কুয়েত থেকে তাদের প্রত্যেককে করোনায় আক্রান্ত নন এমন সনদ দেয়া হয়। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রত্যেক যাত্রীকে স্ক্রিনিং শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। গতকাল সন্ধ্যার আগে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান ও কাউন্সেলর মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, জাজিরা এয়ারলাইন্সে ১২০ জন এবং কুয়েত এয়ারওয়েজে ১৮০ মিলিয়ে ৩০০ শ্রমিক সকালে ঢাকার উদ্দেশে (কুয়েত সময়) রওয়ানা দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে ক্যাম্পে থাকা সব অবৈধ শ্রমিককে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ক্যাম্পে থাকা-খাওয়ার অবস্থা খুব খারাপ হওয়ার কারণে শ্রমিকদের মারাত্মক সমস্যা হয়েছিল। খাবারের ব্যবস্থা কারা করছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মূলত কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকেই এজেন্টের মাধ্যমে খাবার সাপ্লাই দেয়া হতো। আমরা শুধু তাদের খোঁজখবর নিতাম। তাদের পক্ষ থেকেও শ্রমিকদের সার্বিক সহযোগিতা করা হতো জানিয়ে কাউন্সেলর বলেন, এখন আর খাবারের কোনো সমস্যা নেই। পরিস্থিতি ভালো। অস্থায়ী ক্যাম্পে দুই শ্রমিক মারা যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের লাশ আমরা এ ফ্লাইটে পাঠানোর জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। তবে লাশ শিগগির ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুয়েতের বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে কুয়েতে ২৪ ঘণ্টাই কারফিউ দেয়া রয়েছে।
হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিকেলে জানান, কুয়েত থেকে ছেড়ে আসা ফ্লাইট রাত ৮টার পর অবতরণের কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিমানবন্দর স্টেশন ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করা হলে কেউ টেলিফোন রিসিভ করেননি।
এর আগে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসীদের জন্য কুয়েত সরকার এক মাস সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। প্রায় সাড়ে চার হাজার বাংলাদেশীকে দেশে পাঠানোর জন্য তাদের বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে গাদাগাদি করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ক্যাম্পের ভেতরে খাবার না পাওয়াসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে শ্রমিকদের। কিন্তু পুরো বিষয়টাই কুয়েত সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রতিদিন যাচ্ছেন। তাদের দ্রুত দেশে পাঠানোর তাগাদা দেয়া হলেও তারা আজ নয়, কাল নয় করে সময় ক্ষেপণ করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবৈধ বাংলাদেশীদের গ্রহণে যে প্রস্তুত, তা দূতাবাসের পক্ষ থেকে আগেই তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কুয়েত সরকার ফ্লাইট ম্যানেজ করতে না পারায় মূলত বাংলাদেশীদের ক্যাম্পে বেশি কষ্ট করতে হয়েছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন তারা ছয়টি ফ্লাইট প্রস্তুত করেছে। এর মধ্যে তিনটি ফ্লাইটে ৬১৮ জনের একটি তালিকা পেয়েছি।
এ দিকে শ্রমিক ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, কুয়েতের অস্থায়ী ক্যাম্পে শ্রমিকরা এতটাই অমানবিক ও নির্যাতিত হয়েছিলেন যে, মাত্র একটি চিপস খেয়েই কেউ কেউ রোজা রেখেছেন। বিনা চিকিৎসায় দু’জন বাংলাদেশী মারা যাওয়ার কারণে ক্যাম্পের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন।
শুধু কুয়েত নয়, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ২৯ হাজারের মতো বাংলাদেশী শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল কুয়েত থেকে দু’টি ফ্লাইটে ফিরলেন তিন শ’ শ্রমিক।
অপর দিকে বায়রার নেতারা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বিদেশগামী লক্ষাধিক শ্রমিকের ভিসা প্রসেসিং হওয়ার পরও এখন বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এতে এজেন্সির মালিকরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছেন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খুবই নাজুক।